#সংগ্রহ সমকাল
শারীরিক প্রতিবন্ধী আলাল মিয়া পেশায় ইজিবাইক চালক। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এলাকায় অটোরিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়েই জীবনযুদ্ধে লড়ে চলছেন প্রতিদিন।
স্থানীয় সবার কাছে আলাল মিয়া একজন জলজ্যান্ত জীবিত মানুষ হলেও সমাজসেবা কার্যালয়ের কাছে তিনি মৃত। কার্যালয়ের তথ্য মতে, দেড় বছর আগেই মারা গেছেন আলাল মিয়া। তাই বন্ধ করে দেওয়া হয়ছে তাঁর প্রতিবন্ধী ভাতা। এমন তথ্য জেনে রীতিমতো বিস্মিত আলাল মিয়া। কবে, কেন, কীভাবে জীবন্ত একটা মানুষ কাগজেকলমে মারা গেলেন সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে সংশ্লিষ্ট সমাজসেবা কার্যালয় এবং নির্বাচন কার্যালয়ে ছুটে বেড়াচ্ছেন তিনি। তবে এখানেই শেষ নয়। এই বিষয়টি ধামাচাপা দিতে এরইমধ্যে কৌশলে আলালকে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ১০ হাজার টাকাও পাইয়ে দিয়েছেন উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের কারিগরি প্রশিক্ষক জয়ন্তী তালুকদার।ইজিবাইক চালক শারীরিক প্রতিবন্ধী আলাল মিয়া ধর্মপাশা উপজেলার পাইকরাটি ইউনিয়নের ভাটগাঁও গ্রামের বাসিন্দা। ছোটবেলায় আগুনে পুড়ে ডান পা অচল হয়ে যায় তাঁর। ২০০৭ সালে তিনি ধর্মপাশা উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের অধীনে প্রতিবন্ধী ভাতার জন্য তালিকাভুক্ত হন এবং ২০১৭ সালে সুবর্ণ নাগরিক হিসেবে পরিচয়পত্র পান। শুরু থেকেই তিনি নিয়মিত ভাতা পেয়ে আসছিলেন। গত বছরের জানুয়ারি থেকে তাঁর ভাতা বন্ধ হয়ে যায়। তখন থেকে তিনি বিষয়টি জানার জন্য একাধিকবার উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে গিয়েছেন। তবে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা তাঁকে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। পরে আলাল মিয়া বিষয়টি সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যকে জানান। সপ্তাহ দুয়েক আগে বিষয়টি জানতে ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্য উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে যান। তখন সংশ্লিষ্ট কার্যালয়ের কারিগরি প্রশিক্ষক জয়ন্তী তালুকদার জানান, নির্বাচন কমিশনের সার্ভারে আলাল মিয়া মৃত হওয়ার কারণে প্রতিবন্ধী ভাতাভোগীদের সার্ভারেও আলাল মিয়াকে মৃত দেখাচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে গত সপ্তাহে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা গিয়াস উদ্দিনের সঙ্গে কথা বলেন দৈনিক সমকালের ধর্মপাশা প্রতিনিধি। গিয়াস উদ্দিনও জয়ন্তীর মতো একই কারণ ব্যাখ্যা করেন। পরে উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ে গিয়ে আলাল মিয়ার তথ্য যাচাই করলে দেখা যায়, নির্বাচন কমিশনের সার্ভার ও ভোটার তালিকার ১৯০ নম্বর ক্রমিকে আলাল মিয়াকে জীবিতই দেখাচ্ছে। গত ২১ মে ধর্মপাশা উপজেলা পরিষদ ধর্মপাশার ভাটগাঁও গ্রামের প্রতিবন্ধী আলাল মিয়া লাঠিতে ভর দিয়ে চলেন সমকাল নির্বাচনে আলাল মিয়া ভোটও দিয়েছেন। ভাতা বন্ধ হওয়ার ব্যাপারে ভুক্তভোগী আলাল বলেন, ‘হেরা (তারা) জানাইছে আমার নাম মরার (মৃত) তালিকায় গেছে গা। তাই টেয়া (টাকা) আওয়া (আসা) বন্ধ। এক মহিলা আমারে ১০ হাজার টেহা (টাকা) হাওয়াইয়া (পাইয়ে) দিছে। যাতে বিষয়ভা কেউরে (কাউকে) না কই। তয় আমি মরলাম ক্যামনে এইডাইতো বুঝতেছি না।’স্থানীয় ইউপি সদস্য রহিছ মিয়া বলেন, ‘আলাল মিয়া মৃত এমন কোনো প্রত্যয়ন কখনোই দিইনি। অথচ বলা হচ্ছে আলাল মিয়া মৃত। তাই ভাতা বন্ধ আছে।’পাইকুরাটি ইউপি চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক ইকবাল বলেন, ‘একজন ভাতাভোগী মারা গেলে আমরা জেনেশুনে প্রতিস্থাপন করি। আলালের ব্যাপারে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে কোনো প্রত্যয়ন দেওয়া হয়নি। সেটি ছাড়াই আলালকে মৃত দেখানো হলো।’ কারিগরি প্রশিক্ষক জয়ন্তী তালুকদারবলছেন, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্য হয়তো আলালের মৃত্যুসংক্রান্ত প্রত্যয়ন দেওয়ায় এমনটি হয়েছে। তবে তাঁর কাছে সেই প্রত্যয়নপত্র দেখতে চাইলে তিনি জানান, ২০২২ সালের বন্যায় কাগজপত্র (প্রত্যয়ন) পানিতে ভেসে গেছে। অন্য একজন ভাতাভোগীর মোবাইল ব্যাঙ্কিং নম্বর ভুল ছিল। ওই ভাতাভোগীর স্থলে আলালের নম্বর দিলে সে ১০ হাজার টাকা পায়। উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘এ ব্যাপারে আলাল তার কাছে যায়নি। আলাল ৪-৫ বছর এলাকায় ছিল না। কেউ ছয় মাস এলাকায় না থাকলে ইউনিয়ন কমিটি ভাতা বাতিল করতে পারে। তবে ইউনিয়ন কমিটি আলালের ভাতা বাতিলের কোনো সুপারিশ করেছিল কিনা?- এমন প্রশ্নের সদত্তর দিতে পারেননি গিয়াস উদ্দিন।