সুনামগঞ্জ সিভিল সার্জন অফিসে স্বাস্থ্য সহকারী পদে নিয়োগে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ অর্ধশতাধিক পরীক্ষার্থী সিভিল সার্জনের কাছে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
সুনামগঞ্জ সিভিল সার্জন অফিসে ২০১৮ সালের ১১ ডিসেম্বর ও ২০২৩ সালের ১৭ আগস্ট দুটি পৃথক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে ২৩৬ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ আহ্বান করা হয়। এরমধ্যে স্বাস্থ্য সহকারী পদে ১৯৩ জন, সাঁট মুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর একজন, অফিস সহকারী ১৬ জন, পরিসংখ্যানবিদ আটজন, কীটতত্ত্বীয় টেকনিশিয়ান দুইজন, স্টোরকিপার আটজন ও ড্রাইভার আটজন।
বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, সবক’টি পদে ৩৮ হাজার ৩১৪ জন নিয়োগপ্রার্থী আবেদন করেন। এরমধ্যে কেবল স্বাস্থ্য সহকারী পদে আবেদন করেন ১২ হাজার ৫৯ জন। লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেন ১০ হাজার ২৬৮ জন। উত্তীর্ণ হন এক হাজার ৫২ জন। লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা শেষে ৭ মে ১৯৩ জনকে চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ জানিয়ে দেওয়া হয়।
নিয়োগবঞ্চিত প্রার্থীরা লিখিত অভিযোগে জানান, চূড়ান্ত পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর দেখা গেছে নানা অনিয়ম ও ভুলে ভরা। নিয়োগ প্রক্রিয়াটি ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডভিত্তিক হলেও নিয়মের ব্যত্যয় ঘটেছে বহু ওয়ার্ডে। এ অবস্থায় পুরো বিষয়টির পুনঃনিরীক্ষার দাবি করেছেন তারা।
জেলার মধ্যনগরের বংশীকুণ্ডা ইউনিয়নের দুই নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা খোকন মিয়া মাস্টার্স শেষ করে ২০১৮ সালে স্বাস্থ্য সহকারী নিয়োগের জন্য আবেদন করেছিলেন। তাঁর ভাষ্য, তিনি ওই ইউনিয়নের দুই নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। তাদের ওয়ার্ডের চারজন নিয়োগপ্রার্থী লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেন। কিন্তু নিয়োগ হয়েছে তিন নম্বর ওয়ার্ডের আরেকজনের। অথচ, এটিই ছিল তাঁর শেষ পরীক্ষা। বয়সসীমা শেষ হওয়ায় তিনি আর সরকারি চাকরিতে আবেদন
করতে পারবেন না।
সুনামগঞ্জ সিভিল সার্জন অফিস
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নিয়োগপ্রত্যাশী বললেন, লিখিত পরীক্ষার ফল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করা হয় ২৫ এপ্রিল। ২৬ এপ্রিল আবার সংশোধিত ফলাফল দেখিয়ে জগন্নাথপুরের দুইজনের নম্বর দিয়ে উত্তীর্ণ দেখানো হয়। ২৯ এপ্রিল আবার দিরাইয়ের কয়েকজনকে উত্তীর্ণ দেখিয়ে সংশোধনী বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। এই দুই তালিকা থেকেই দুইজন মৌখিক পরীক্ষায়ও উত্তীর্ণ হয়েছে। তাঁর ধারণা, ওই দুইজনকে চাকরি দেওয়ার জন্যই এভাবে সংশোধনী নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। ওই সময় দুইজনের বাইরে অন্যদের রোল দেওয়া হয় প্রক্রিয়াটিকে বিশ্বাসযোগ্য করার জন্য। সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার কাঠইর ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড থেকে চারজন লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেন। কিন্তু নিয়োগ হয়েছে পাঁচ কিলোমিটার দূরের অন্য ওয়ার্ডের একজনের। ২ নম্বর ওয়ার্ড থেকে নিয়োগপ্রত্যাশী মনিকা তালুকদার ও বাবলু দাস নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়মের অভিযোগ তুলে প্রতিকার দাবি করেন।
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার সলুকাবাদ ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সুজলা আক্তার ও একই ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সালমা আক্তারও একই ধরনের অনিয়মের অভিযোগ করে পরীক্ষাসহ সকল কাগজপত্র পুনঃনিরীক্ষার দাবি করেছেন।
এ বিষয়ে জেলা সিভিল সার্জন ডা. আহম্মদ হোসেন বললেন, ভুলত্রুটি থাকলে চূড়ান্ত ফলাফলে উত্তীর্ণ হলেও, পরে তা সংশোধন হবে। কেউ ভুল তথ্য দিলে গোয়েন্দা রিপোর্টে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হবে। লিখিত পরীক্ষার সংশোধনী বিজ্ঞপ্তি জগন্নাথপুর ও দিরাইয়ের দুইবার প্রকাশ এবং ওই নম্বর থেকে চূড়ান্তভাবে প্রার্থী নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ডিজিট ব্যবধান ছিল, শূন্য কম বেশি ছিল। এসব কারণে সংশোধনী বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে পরীক্ষা আয়োজক কমিটির কোনো খারাপ
উদ্দেশ্য ছিল না বলে দাবি করেন তিনি।
#সংগ্রহ সমকাল