ইবিতে মন্দির ভাংচুরের ঘটনায় বহিষ্কৃত ছাত্রলীগ নেতা শীর্ষ পদে আসতে ঢাকায় দৌড় ঝাপ শুরু করেছে বলে জানা গেছে। এর আগে ২০১৯ সালের ১৪ ই জুলাই পলাশ ও রাকিবের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের এক বছর মেয়াদী দুই সদস্যের কমিটি দেয় কেন্দ্র। পরে ২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর বিকেলে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি আল-নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিকে বিলুপ্ত ঘোষণা করেন। সেই সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কমিটিতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে আগ্রহীদের কাছ থেকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে জীবনবৃত্তান্ত আহ্বান করা হয়।
জীবন বৃত্তান্ত নেয়া হলেও দীর্ঘ ৭ মাস পেরিয়ে গেলেও দেয়া হয় নি ইবি ছাত্রলীগের কমিটি। তবে সম্প্রতি পাঁচ ছয় জনের নাম উঠে এসেছে যারা ছাত্রলীগের শীর্ষ নেত্রীত্বে আসতে চায়। এর মধ্যে বেশ এগিয়েও রয়েছে মন্দির ভাংচুরের ঘটনায় বহিষ্কৃত ছাত্রলীগ নেতা ফয়সাল সিদ্দিকী আরাফাত। আরাফাত ২০১৬ সালের ২৩ মার্চ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিসির নিচ তলায় অবস্থিত সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উপসনালয়ে হামলা ও ভাংচুর, মাদক, অস্ত্র একাধিক ঘটনায় অভিযুক্ত থাকায় ২০১৬ সালের ৩০ মার্চ রাতে তৎকালীন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসাইন সাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী কার্যক্রমে অংশ নেওয়ায় তাকে ছাত্রলীগ থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারও করা হয়।
পুলিশের গাড়ি ভাংচুর করে ক্যাম্পাসে মদ্যপ ও মাদকসহ গ্রেপ্তার আসামিদেরকে ছাড়িয়ে আলোচনায় আসে এই ছাত্রলীগ নেতা আরাফাত। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী রেজওয়ানুল সিদ্দিকী কাব্যকে মাদকাসক্ত অবস্থায় অস্ত্র সহ আটক হয় পরে তাকে বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কাব্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু হলের আন্তর্জাতিক ব্লকের ৪১৩নং কক্ষে থাকেন। ঘটনার দিন নিজ কক্ষ থেকেই ওই অস্ত্র আনেন বলে জানান তার এক সহযোগী। ওই কক্ষে নিয়মিত রুটিন করে প্রতি রাত ১০টার পর থেকে মাদক সেবন চলে। মাদক নিতে অন্যান্য হল থেকে আরও ৫-৭ জন ওই কক্ষে আসেন। ভোররাত পর্যন্ত চলে মাদক সেবন। সর্বশেষ ছিনতাইয়ের ৫ হাজার টাকা নিয়ে ইয়াবা কিনে রাতে মাদক সেবন করেন তারা। কাব্য ছাত্রলীগ নেতা শাহজালাল সোহাগের অনুসারী ও আরাফাতের আস্থাভাজন কর্মী।
আরাফাত কুষ্টিয়া চরমপন্থী জাসদ নেতা, আমৃত্যু কারাদণ্ডের আসামি কালু ও কুষ্টিয়া সদর উপজেলার ১১নং আব্দালপুর ইউনিয়নের নৌকা বিরোধী চেয়ারম্যান আলী হায়দার স্বপনের ভাতিজা। গত ২০১৬ সালের ও গত ৫ জানুয়ারি ২০২২ সালের ইউপি নির্বাচনে নৌকার বিপক্ষে অবস্থান নেয় তার বড় কাকা আলি হায়দার স্বপন। তার আর এক কাকা আলী মূর্তজা খসরু ৭ই জুন ২০০৫ সালে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। পরে বিএনপির ক্ষমতার বিলুপ্তির মুখে কৌশলে ছাত্রলীগে যোগ দেন। ইতি পূর্বেও আরাফাতের বিরুদ্ধে অর্ধকোটি টাকা নিয়ে নেতা হতে ঢাকায় দৌড় ঝাপের অভিযোগ উঠেছিল।
আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্রলীগের নেতা নির্বাচনের জন্য ৫ টি শর্ত দেন এক. ছাত্র রাজনীতির শুরু থেকেই ছাত্রলীগ করতে হবে। দুই. পারিবারিক পরিচয় নিশ্চিত হতে হবে। ছাত্রলীগ নেতার বাবা, মা, ভাই, বোন কি ধরনের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত তা জানতে হবে। পরিবারের কেউ বিএনপি-জামাত বা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী কোনো সংগঠনের সঙ্গে জড়িত থাকলে, ঐ ছাত্রলীগ কর্মী নেতৃত্বের জন্য বিবেচিত হবে না।
তিন. নেতৃত্বের জন্য বিবেচিত হতে হলে ছাত্রলীগ কর্মীকে নিষ্কলুষ থাকতে হবে। তাঁর বিরুদ্ধে কোনো চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ থাকবে না। চার. ছাত্রলীগ নেতা হতে চাইলে তাকে শুধুই ছাত্র হতে হবে। পাঁচ. কোটা সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ছিল এমন ছাত্রলীগ কর্মী নেতৃত্বের জন্য বিবেচিত হবে না। এই পাঁচশর্ত পূরণকারীদের মধ্যে থেকেই আগামী ছাত্রলীগ নেতা বিবেচিত হবেন।