ভরা বর্ষা মৌসুমে পানি না থাকায় পাট নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কুষ্টিয়ার বিভিন্ন উপজেলার কৃষকরা। আষাঢ় মাস শেষ হয়ে শ্রাবণ মাসের নয় তারিখ। অথচ এই ভরা বর্ষা মৌসুমেও খাল-বিল, পুকুর, ডোবা, নালা, জলাশয়গুলোতে বর্ষার পানি না আসায় পাটজাগ না দিতে পেরে কৃষকরা দিশাহারা হয়ে পড়েছেন।
সোনালি আঁশ পাট কেটে পানির আশায় খেতেই স্তুপ করে রেখেছেন অনেক কৃষক, এতে রৌদ্রতাপে অনেক পাট খেতেই শুকিয়ে নষ্ট হচ্ছে। পাট কাটাসহ ফসল ঘরে ওঠানো নিয়ে মহাসংকটে সময় পার করছেন চাষিরা। পানি স্বল্পতা ও শ্রমিক সংকট এতে নাজেহাল অবস্থায় কৃষকরা।
বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে দেখা যায়, বিরূপ আবহাওয়া মধ্যেও অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার অধিক পাট চাষ হয়েছে এবং আবহাওয়া বিরূপ হওয়ায় এবার অধিক পরিশ্রম ও সেচ দিয়ে পাট বাঁচাতে হয়েছিল তাদের। সব কিছুর পর এবার বাম্পার ফলন হয়েছে কিন্তু পানির অভাবে কৃষক পড়ছেন চরম বিপাকে। কেউ কেউ ঘোড়ার গাড়ি, ভ্যান, নছিমন, ঠেলাগাড়িযোগে কাঁচাপাট নিয়ে ছুটছে পানির খোঁজে।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালীর উপজেলার চাপড়া ইউনিয়নের ছেঁউড়িয়া দবির মোল্লার রেলগেট এলাকায় কালী গঙ্গা নদীর পানিতে বিভিন্ন এলাকার পাট চাষীরা ঘোড়ার গাড়ি, ভ্যান গাড়ি, নছিমন, ঠেলাগাড়িযোগে দূরদূরান্ত থেকে পাট এনে জাগ দিতে দেখা যায়।
পাট চাষীদের লোকসানের সম্ভাবনা না থাকায় দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে পাট চাষির সংখ্যা। এ বছর পাটের আবাদ বৃদ্ধি ও পাটের বাম্পার ফলন। কুষ্টিয়ায় বিভিন্ন উপজেলায় কাঙ্খিত বৃষ্টিপাতের অভাবে জলাশয়গুলো ভরাট না হওয়ায় পাট জাগ দিতে না পারায় কৃষকরা পড়েছেন মহাবিপাকে। ফলন ভালো এবং বাজার দর ভালো থাকায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটলেও সময়মত পানির অভাবে পাট জাঁগ (পঁচানো) নিয়ে বিপাকে পড়েছেন পাট চাষিরা।
কুষ্টিয়ার পাট পরিদর্শক অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর জেলায় এক লাখ ২৫ হাজার ২৮০ একর জমিতে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে চাষ হয়েছে এক লাখ ১৫ হাজার ২৮০ একর জমিতে।
এ বছর কুষ্টিয়া সদরে পাঁচ হাজার ৪২৬ একর, কুমারখালীতে ১২ হাজার ৫৮৭ একর, খোকসায় ১০ হাজার ৭৪৪ একর, মিরপুরে ১২ হাজার ৬৯৫ একর, ভেড়ামারায় ২২ হাজার ৯৪৬ একর এবং দৌলতপুরে ৫০ হাজার ৮৮২ একর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। গত বছর জেলায় পাট চাষ হয়েছিল এক লাখ এক হাজার একর জমিতে।
কিন্তু ভারী বর্ষণ না থাকায় অনেক কৃষক পাট কাটতে চাচ্ছেন না। আবার অনেকে পাট কেটেও জমিতে ছিটিয়ে বা স্তুপ করে রেখেছেন। কেউ কেউ শ্যালো মেশিন দিয়ে পানির ব্যবস্থা করলেও তাতে বাড়তি খরচ গুনতে হচ্ছে। নিশ্চিত লাভ জেনেও পানির অভাবে কৃষকের স্বপ্ন অধরা থেকে যাচ্ছে। এমনিতেই পাট চাষে অনেক পরিশ্রম ও অর্থ ব্যয় হয়। পঁচা পানিতে আঁশ এড়ানো শ্রমিকদের মজুরীও বেশি।
উপজেলার জগশ্বর গ্রামের পাটচাষী আব্দুর রাজ্জাক ও পরানখালী গ্রামের আমিরুল ইসলামসহ অনেকে জানান, এবার বৃষ্টিপাত কম, পাট জাগ দিতে পারছিনা। তাছাড়া নদীতে পাট জাগ দিতে গেলে আনা নেওয়ার খরচ উঠবে না। আশপাশে শ্যালো মোটরের ব্যবস্থা না থাকায় সেচের পানিও পাচ্ছিনা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শায়েখুল ইসলাম বলেন, দুই সপ্তাহ আগে বৃষ্টিপাতে নদীসহ বিভিন্ন খালে পানি দেখাদেয়। ফলে কৃষকরা তাদের সোনালী আঁশ পাট কাটতে শুরু করেন। কিন্তু এরপর আর বৃষ্টিপাত না হওয়ায় খরায় পানি শুকিয়ে যায়। ফলে পাটের বাম্পার ফলন হলেও পানি সংকটে পড়েছেন কৃষকরা। তিনি আরো জানান এ বছর প্রাকৃতিক খরার কারণে ভরা মৌসুমে বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় পানির অভাবে কৃষকরা পাট জাগ দিতে পারছেন না। তবে রিবন রেটিং পদ্ধতিতে কৃষক যাতে পাট পচাতে পারেন সেই বিষয়ে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণসহ পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।